পৃথিবীব্যাপী যে সকল দুর্যোগ সংগঠিত হয় সেগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
১) প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং
২) মানবসৃষ্ট দুর্যোগ।
প্রাকৃতিক কারণে যে সকল দুর্যোগ সৃষ্টি হয়, সেগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে। এ ধরণের দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, কালবৈশাখী, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, লবণাক্ততা, তুষারপাত ইত্যাদি।
প্লেট টেকটোনিক্স (Plate Tectonics) ভূতাত্ত্বিক মতবাদ অনুসারে ভূত্বক প্রধানত সাতটি বড় ও কয়েকটি ক্ষুদ্র গতিশীল কঠিন প্লেট দ্বারা গঠিত, যেগুলি নিম্নস্থ ভ্রাম্যমান উষ্ণ গুরুমন্ডলীয় পদার্থের ওপর ভাসছে। প্লেটের বিচলন (movement) ও পারস্পরিক ক্রিয়া ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, পর্বত সৃষ্টি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ভূতাত্ত্বিক ঘটনাবলীর নিয়ন্ত্রক বলে ধারণা করা হয়। তিন ধরনের পারস্পরিক প্লেট সীমানার কথা জানা যায়।
যথা: সমকেন্দ্রাভিমুখী সীমা, অপসারী সীমা ও পরিবর্তক চ্যুতি সীমা।
সমকেন্দ্রাভিমুখী সীমা যখন একে অপরের দিকে অগ্রসরমান দুটি প্লেট কেন্দ্রাভিমুখী হয়ে অবশেষে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন একটি প্লেট অপরটির নিচে চাপা পড়ে। এই ধরনের প্লেট সংঘর্ষের ফলে পর্বতমালার সৃষ্টি হয় এবং প্লেট প্রান্তিকের আশেপাশে আগ্নেয়গিরির কর্মকান্ড সংঘটিত হয়।
অপসারী সীমা এই ক্ষেত্রে দুটি প্লেট একে অপরের থেকে সরে যেতে থাকে। এই ধরনের প্লেট সীমানার ফলে নতুন সমুদ্র তলদেশের এবং সামুদ্রিক আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয়।
পরিবর্তক চ্যুতি সীমা যখন দুটি প্লেট একে অপরকে অতিক্রম করে যায়, তখন তাকে পরিবর্তক চ্যুতি সীমা বলে। তিন ধরনের প্লেট বিচলনেই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
বঙ্গীয় অববাহিকার অধিকাংশই পড়েছে বাংলাদেশে। ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এর উৎপত্তি। ক্রিটেসিয়াস যুগের পূর্বে (সাড়ে বারো কোটি বছর আগে) বাংলাদেশের অংশবিশেষ সহ (বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল) ভারতীয় প্লেট, অ্যান্টার্কটিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত থেকে গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে একটি বৃহৎ মহাদেশ গড়ে তোলে। বাংলাদেশের অবশিষ্টাংশের তখন অস্তিত্ব ছিল না। অতঃপর গন্ডোয়ানাল্যান্ডে ফাটলের ফলে ভারতীয় প্লেটের উত্তরমুখী সঞ্চরণ ও সর্বশেষে এশীয় প্লেটের সঙ্গে এর সংঘর্ষের ফলে হিমালয় পর্বতমালা ও বাংলাদেশের বদ্বীপীয় সমভূমির সৃষ্টি হয়।
ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যে পর্যায়ক্রমিক সংঘর্ষ ইয়োসিন যুগে (৫ কোটি থেকে সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে) হিমালয়ের প্রারম্ভিক উত্থানের সময় প্রথম সংঘটিত হয়। নবীন ইয়োসিন যুগে (সাড়ে তিনকোটি থেকে ৪ কোটি) ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যবর্তী টেথিস সাগরের সর্বশেষ চিহ্ন সম্ভবত বিলীন হয়ে যায়। এই সময়েই ভারতীয় প্লেটের অভিসরণ দিক দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষসহ উত্তর থেকে উত্তর পূর্ব দিকে পরিবর্তিত হয়ে যায়। ওলিগোসিন যুগ থেকে (সাড়ে তিনকোটি বছর আগে) প্লেট সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে এবং বিশাল নদীমালার জলরাশিতে দক্ষিণে আদি বঙ্গীয় অববাহিকা ভরে উঠলে উত্থিত হিমালয়ের অবক্ষেপ নেমে আসতে শুরু করে। মায়োসিন পরবর্তী সময় থেকে (আড়াই কোটি বছর তৎপরবর্তী) অববাহিকায় দ্রুত অবনমনের সঙ্গে হিমালয় পবর্তমালার দ্রুত উত্থানের ফলে বিপুল অবক্ষেপের সুতপের পাশাপাশি বৃহদাকৃতির বদ্বীপ গড়ে ওঠে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ নামের এই সুবৃহৎ বদ্বীপের গঠন প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত আছে। এদিকে ভারতীয় প্লেটের এশীয় প্লেটের নিচে অধোগমন হিমালয়ের উত্তরাঞ্চলে একটি সন্ধি রেখা অঞ্চল সৃষ্টি করেছে। আর পূর্বে ইন্দো-বার্মান পর্বতসারি পূর্বাঞ্চলীয় প্লেট সংঘর্ষের অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। এশীয় প্লেটের সঙ্গে ভারতীয় প্লেটের সংঘর্ষ আজও অব্যাহত আছে। মাঝে মাঝেই প্লেট সংলগ্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প এ কথাই প্রমাণ করে।
সোর্সঃ বাংলাপিডিয়া